নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি মালিকানাধীন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ৫ তারকা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলটিকে ধ্বংস করতে শুরু হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। হোটেলে কর্মরত শ্রমিকলীগের এক নেতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হোটেলের ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঐ শ্রমিকলীগ নেতার সন্ত্রাসী তৎপরতায় গত দুই মাসেই চাকরি হারিয়েছেন হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ব্রিটিশ নাগরিক রবিন জেমস, এক্সিকিউটিভ শেফ জহির খান, পিপলস অ্যান্ড কালচার ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার রুমাসহ বেশ কয়েকজন।
৫ আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও সোনারগাঁও হোটেলে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং এখনো ফ্যাসবাদী কায়দায় শ্রমিকলীগের সভাপতি দুলাল চন্দ্র মজুমদারের ইচ্ছায় অনৈতিকভাবে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। অনেককে চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে হোটেলে এক রকম ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন ঐ নেতা।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার একটি ঐতিহাসিক পাঁচ তারকা হোটেল। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই হোটেলের মালিক বাংলাদেশ সরকার, তবে হোটেলটি পরিচালনা করে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্যান প্যাসিফিক হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস। বিদেশি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলেও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল চন্দ্র মজুমদার ও হোটেলের সিনিয়র কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে বিদেশি নাগরিকদের এখানে জেনারেল ম্যানেজার পদে কাজ করতে দেননা।
জানা যায়, যখনই বিদেশী নাগরিকদের এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়, তখনই তারা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের চাকুরিচ্যুত করেন। পূর্বের জিএম ব্রিটিশ নাগরিক রবিন জেমস এর চাকুরিচ্যুতির পর ষড়যন্ত্রকারী সেই সিনিয়র কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্বে আছেন। আসিফ আহমেদের সাথে যোগসাজসে শ্রমিকলীগের ঐ নেতা বর্তমানে হোটেলের অভ্যন্তরে একটি প্রভাব বলয় তৈরি করেছেন। দুইজন একে অপরের সহযোগিতায় লুটেপুটে খাচ্ছেন হোটেলের সম্পদ। চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছেন হোটেলের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অপরদিকে পরিকল্পিতভাবে হোটেলের অভ্যন্তরে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করায় হোটেলে অতিথির সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হোটেলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বিগত নির্বাচনে সাধারণ কর্মচারীদের ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে সেই ফলাফল পাল্টে জোরপূর্বক জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা দুলাল চন্দ্র মজুমদারকে সভাপতি ও শাহ আলমকে সেক্রেটারি পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দুলাল চন্দ্র বর্তমানে আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক। নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক ফলাফল ঘোষণার বিরোধীতা করায় সে সময়ও বেশ কয়েকজনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
জানা গেছে, তিনি সোনারগাঁও হোটেলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আসিফ আহমেদের সাথে হাত মিলিয়ে হোটেলের ভিন্নমতাবলম্বী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, হোটেলের গুরুত্বপূর্ণ লোকদেরকে বিভিন্ন অপকৌশলে সম্মানহানি করতে পারদর্শী এই দুলাল গং।
বিশ্লেষকগণ হোটেলটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান অবৈধ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ভেঙে দেয়াসহ প্রশাসনিক সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল চন্দ্র মজুমদার ও হোটেলের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার আসিফ আহমেদের মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
Leave a Reply