ঢাকা অফিস: ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিদেশে বাংলাদেশি নারীকর্মীর অংশগ্রহণ কমেছে ২২ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিদেশে ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন নারীকর্মী কর্মের উদ্দেশে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যা মোট অভিবাসনের ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। তবে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাদ দিলে, এটি গত ১০ বছরে নারী অভিবাসনের সর্বনিম্ন রেকর্ড।
এ তথ্য তুলে ধরা হয় শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৪’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। প্রতিবছর অভিবাসন খাত বিশ্লেষণ করে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ সম্মেলনে রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী ছাড়াও, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণার ফলাফল:
রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে বলেন, বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা বেশ উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, শোভন কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তা এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ার নানা জটিলতার কারণে নারীরা ক্রমেই বিদেশে কর্মসংস্থান খুঁজতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
এ বছরের প্রথম ১১ মাসে ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে গেছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ২০২৪ সালের শেষে মোট অভিবাসনের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশবিশেষে নারীকর্মীর অভিবাসন:
তাসনিম সিদ্দিকী আরও জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারীকর্মী সৌদি আরবে অভিবাসিত হয়েছেন, যাঁর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৩৮ জন। এছাড়া জর্ডান (২ হাজার ১২৪ জন), কাতার, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, হংকং এবং জাপানসহ অন্যান্য দেশে ছোট পরিসরে নারীরা অভিবাসিত হয়েছেন। তবে, হংকং এবং জাপানের মতো দেশে গমনকারী নারীকর্মীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
অভিবাসনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ:
তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বিদেশে কর্মরত নারীদের জন্য শোভন কর্মক্ষেত্রের অভাব এবং নিরাপত্তাহীনতা যেমন একটি বড় সমস্যা, তেমনি অভিবাসন প্রক্রিয়া জটিল এবং খরচের দিক থেকেও সমস্যা সৃষ্টি করছে। রামরুর গবেষণা অনুযায়ী, এসব কারণে নারীকর্মীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
প্রত্যাবর্তিত কর্মীর ডেটা সংগ্রহের গুরুত্ব:
একই সঙ্গে তাসনিম সিদ্দিকী ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশি কর্মী অভিবাসিত হয়েছেন সে হিসাব রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, প্রতিবছর কতজন কর্মী দেশে ফিরেছেন তার তথ্য সংগ্রহ এখনও সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রত্যাবর্তিত কর্মীদের ডেটা সংগ্রহ পদ্ধতি উন্নত করার এখনই উপযুক্ত সময়।
অভিবাসন খাতের উন্নয়নে সরকারি পদক্ষেপের আহ্বান:
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তাসনিম সিদ্দিকী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অভিবাসন খাতের উন্নয়ন এবং নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিশেষত, শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে নারীরা আরও উৎসাহী হয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান খুঁজতে পারেন।
Leave a Reply