বাংলার ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে দেশের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা ওই সময়ের ডলার বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১০ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায় রূপান্তরিত হয়। বাকি ঋণটি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ঋণের এমন ক্রমবর্ধমান পরিমাণ কার্যকর ব্যবস্থাপনা ছাড়া ভবিষ্যতে বড় অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে। তারা বলেন, উৎপাদনশীল খাতে ঋণের অর্থ ব্যয় না করলে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। বিগত সরকারগুলোর আমলে অনেক ঋণ অপচয় ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের হার জিডিপির তুলনায় বিশ্বের সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ঋণ ও সুদ পরিশোধে ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এর ফলে ঋণ পরিশোধই রাজস্ব আয়ের বড় অংশ গ্রাস করছে। আইএমএফ-এর চাপে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এটি অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৯৯ শতাংশ। এর ফলে ডলারের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা ঋণ পরিশোধে জটিলতা তৈরি করছে। ইতোমধ্যে কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সময়মতো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের ভার সামাল দিতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে এর আয়বর্ধকতা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া, রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া উচিত।
ড. জাহিদ হোসেনের মতে, দেশের জিডিপি আকারের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, যা ঋণের প্রকৃত পরিস্থিতি মূল্যায়নে বাধা তৈরি করে। তিনি বলেন, “জিডিপির অনুপাতে ঋণ কম থাকলেও রাজস্ব আয় এবং বৈদেশিক আয়ের তুলনায় ঋণের চাপ অনেক বেশি। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদরা কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ খাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
Leave a Reply