সেলিম সরকার, বগুড়া:
বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) বিধিমালা, ২০১০–এর বিধি ৫ ও ৬ অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার বাসিন্দাদের মতামত ও আপত্তি গ্রহণ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।
এই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, শিঘ্রই বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে স্থানীয়দের মতামত ও আপত্তি গ্রহণ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভা দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা হিসেবে পরিচিত। শুরুর দিকে সুত্রাপুর, কাটনারপাড়া ও শিববাটি মৌজা নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার আয়তন ছিল মাত্র ১২ বর্গকিলোমিটার এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ১২টি। ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর, তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ আগ্রহে পৌরসভার আয়তন বাড়িয়ে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ২১-এ উন্নীত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারের পরিবর্তনের ফলে সেই প্রক্রিয়া তখন থেমে যায়।
বগুড়া পৌরসভা আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ইতোমধ্যে বরিশাল, খুলনা এবং সিলেটের মতো সিটি কর্পোরেশনকেও ছাড়িয়ে গেছে। শহরটির ওপর দিয়ে ১১টি জেলার যানবাহন চলাচল করে, রয়েছে আধুনিক মেডিকেল কলেজ, দেশের অন্যতম বৃহৎ সরকারি কলেজ, নানা ধরনের শিল্প ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, গ্যাস সংযোগসহ সবধরনের নাগরিক সুবিধা। বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এই জেলায় গতানুতিক উন্নয়নের বাইরে বাড়তি কিছুই করা হয়নি। তবুও ভৌগলিক সুবিধার কারণে ব্যক্তি উদ্যোগে এই জেলায় শিল্পায়ন ও ব্যবসার গতি দমিয়ে রাখা যায়নি। উত্তরবঙ্গের রাজধানীখ্যাত এই ক্রমে বিস্তার লাভ করে একটি উদীয়মান শহরে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাদশা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মূল রূপকার ছিলেন তারেক রহমান। তিনি মেয়র থাকাকালে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন, যার ভিত্তিতেই পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর ভাষায়, “ফ্যাসিস্ট সরকার” এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তিনি অবিলম্বে বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার আহ্বান জানান।
অপরদিকে, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণেই এই উদ্যোগ আবার গতি পেয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের মতে, এই ঘোষণা কেবল প্রশাসনিক রূপান্তর নয়, বরং বগুড়াবাসীর আত্মপরিচয়, উন্নয়ন ও আধুনিক শহরের পথে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার জন্য এখন শুধু অপেক্ষা গণবিজ্ঞপ্তি, জনমত গ্রহণ ও মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বগুড়া অবশেষে দেশের ১৩তম সিটি কর্পোরেশন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। শহরের মানুষ এখন প্রতীক্ষায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
Leave a Reply